প্রত্যয় ধর্ম ডেস্ক: আল্লাহ তায়ালার বিশেষ প্রিয় একজন নবী হজরত ইব্রাহিম (আ.)। যিনি তার জীবনের প্রায় বড় অংশ অতিবাহিত করেন সন্তানহীন অবস্থায়, কিন্তু মহান রাব্বুল আল-আমীনের কাছে নেক সন্তান চেয়ে বারবার দোয়া করতে থাকেন। মহান মালিক দোয়া কবুল করেন। ৮০ বছর বা ১২০ বছর বয়সে আল্লাহ তায়ালা দান করেন একজন নেককার পুত্র সন্তান। নামা রাখা হয় ইসমাঈল (আ.)-এর বয়স যখন ৭ বা কোনো বর্ণনামতে ১৩ তে উপনীত হলো তখন স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ইব্রাহীমকে (আ.) নির্দেশ দেন। তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু আমার রাহে কোরবানি কর। নবীদের স্বপ্নও অহি।
তাই নবীগণ যা স্বপ্নে দেখেন তাতে কোনো সন্দেহ থাকে না। নবীদের স্বপ্ন শরীয়তের দলিল। হাদিসে এসেছে নবীদের (আ.) চোখ ঘুমায় কিন্তু তাদের অন্তর জাগ্রত থাকে। তাই তারা স্বপ্নে কি দেখেন তা সঠিকভাবে বুঝতে ও মনে রাখতে পারে। আর শয়তানের কু-মন্ত্রণা থেকে আল্লাহ নবীদের হেফাজত করেছেন। তাই স্বপ্নের আদেশ অনুযায়ী পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর রাহে কোরবানি করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন ও মিনার ময়দানে নিয়ে যান। অতঃপর প্রিয় পুত্রকে বললেন, ‘হে প্রিয় পুত্র! আমি তোমাকে স্বপ্নে জবাই করতে দেখেছি, এ বিষয়ে তোমার কি মতামত?’ (সুরা সফফাত, আয়াত : ১০৩)।
যেমনি পিতা তেমনি পুত্র! নবী পুত্র ইসমাইল (আ.) জবাব দিলেন, ‘হে আমার সম্মানিত পিতা আপনি যেমনটা আদিষ্ট হয়েছেন তাই পালন করুন। ইনশাল্লাহ আমাকে ধৈর্য্যশীলদের মধ্য থেকে পাবেন। অতঃপর ইব্রাহিম (আ.) পুত্রকে জবাই করার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। আল্লাহপাক ডাক দিয়ে বললেন, হে ইব্রাহিম তোমার স্বপ্নকে তুমি বাস্তবে পরিণত করেছ। এটা ছিল তোমার রবের পক্ষ থেকে এক মহান পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় তুমি উত্তীর্ণ হয়েছ। আল্লাহপাক বলেন এভাবেই আমি নেককারদের পুরস্কৃত করে থাকি।’ (সুরা সফফাত, আয়াত-১০৩-১০৭)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি তার পুত্রের বদলে মর্যাদাবান একটি জান্নাতি দুম্বা পাঠিয়ে দিলাম।
লক্ষ্য করার বিষয় হলো হজরত ইব্রাহিম (আ.) প্রিয় পুত্র ইসমাইলের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেল পুত্র জবাই হলো না। তার পরিবর্তে আল্লাহর প্রদত্ত সেই জান্নাতি দুম্বাটি জবাই হয়ে গেল। তার পরেও আল্লাহপাক ইব্রাহিমকে (আ.) পরীক্ষায় পাশ করা ও পুরস্কারের সু-সংবাদ প্রদান করেন। এখানে বোঝা গেল প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) কোরবানি হওয়াটাই আল্লাহ তায়ালার কাছে মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল ইব্রাহিম (আ.)-এর হৃদয়ের অবস্থা পরীক্ষা করা। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এই কোরবানি জন্তুর রক্ত, মাংস কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। বরং আল্লাহর কাছে পৌঁছে তোমাদের মনের তাকওয়া, অর্থাৎ ইখলাস ও আন্তরিকতা। (সুরা হজ, আয়াত : ৩৭)। তাই আসুন আমরা যারা কোরবানি করব শুধু আল্লাহকে রাজি-খুশির জন্যই করব। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর এই আত্মত্যাগের শিক্ষাকে ধরে রাখার জন্যই উম্মতে মুহাম্মদির উপর এই কোরবানিকে ওয়াজিব করা হয়েছে। যা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।